স্পিন নির্ভর বাংলাদেশে পেসারদের রাজত্ব; টিকবে কতদিন?
এশিয়াকে বলা হয় পেসারদের সর্গরাজ্য। এই এশিয়া থেকে সারাবিশ্বে বহুকাল দাপিয়ে বেড়িয়েছে কত-শত পেসার। আশি দশকের কাপিল দেব থেকে শুরু করে ইমরান খান। তারা ফুরিয়ে যাবার পর আধিপত্য বিস্তার করেন ওয়াসিম আকরাম লাসিথ মালিঙ্গার মতো বোলাররা। তাদের গতির সাথে সুইং ডেলিভারিতে বোকা বনে যেতো ক্রিজে থাকা ব্যাটাররা। এরপর গতির ঝড় তুলতে ক্রিকেট বিশ্বে আবির্ভাব ঘটে শোয়েব আক্তারের মতো বোলারের। এখনো বিশ্বের ইতিহাসে তার মতো সর্বোচ্চ গতি কেউ দিতে পারেনি।
ছবিঃ- ক্রিকলাইনবিডি |
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে প্রায় সব দলের পেসারদের আপনি কমতি মনে করতে পারবেন না। এই প্রযুক্তিগত ক্রিকেটে এখন প্রতিটা দেশের পেসারদের আধিপত্য দেখা যায়। এদিক দিয়ে দেখলে খানিকটা কমই মনে হতো বাংলাদেশকে। বছর দুই-এক আগেও স্পিন নির্ভর বাংলাদেশে পেসারদের তেমন রাজত্ব করতে দেখেনি দেশী ক্রিকেট সমর্থকেরা। একটা সময়ে দেশের ক্রিকেটের পেইস-স্পিনারদের এক সাথে পরিসংখ্যান হিসাব করলে এগিয়ে থাকতো রাজ্জাক-সাকিব-মিরাজরা। বিদেশের মাটিতে দল ভালো করতে চাইলে পেসারদের ভালো করাটা যে বড্ড জরুরি। এখন দিন বদলেছে, তাসকিন, এবাদত, শরিফুল বা হাসান মাহমুদ টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, যেকোনো ফরম্যাটে তাদের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।
এই যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের কথায় ধরুন। যেকোনো পেইস বোলারের মূল অস্ত্র হলো তার গতি। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে নতুন বল হাতে পাওয়ার পর আব্দুল্লা শফিককে করা তাসকিনের প্রথম ওভার দেখে পাকিস্তানের সমর্থকের কপালে ভাজ পড়ার মতো অবস্থা। একশো পয়তাল্লিশের বেশি গতির সাথে ইনসুয়িং। আব্দুল্লাহ শফিককে আউট করা বলটি তাসকিনের হাত থেকে রিলিজ হয়ে পিচে পড়ার পর পনেরো ডিগ্রিরও বেশি টার্ন করে স্টাম্পে গিয়ে লাগে। সেই ওভারের প্রতিটা বলছিলো দেখার মতো।
তার সাথে আছে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হওয়া নাহিদ রানা। প্রায় একশো পঞ্চাশ কিলোমিটার পার আওয়ারে বল করার পাশাপাশি ইনসুয়িং - আউটসুয়িং। নতুন বলে উইকেট তুলার কাজটি ভালোই করতে পারেন শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ। বিদেশী ক্রিকেট পরাশক্তিকে টেক্কা দিতে এক ঝাক পেসার তৈরি করে রেখেছে বিসিবি। একটা বোলারকে ক্রিকেট জগতে তখনই পরিপূর্ণ বোলার হিসেবে গন্য করা হয় যখন তার গতির সাথে লাইন লেন্থ ঠিক রেখে নতুন বলে সুয়িং করাতে পারে। এদিকটায় সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই করে আসছে বাংলাদেশের দলে থাকা বর্তমান পেসাররা।
তবে আসল প্রশ্ন হলো; স্পিন নির্ভর বাংলাদেশে পেসারদের রাজত্ব টিকবে কতদিন? তাসকিন, এবাদত, হাসান মাহমুদ, বা শরিফুল ইসলাম, এরা বাংলাদেশকে দেয়ার এখনো অনেক কিছুই এখনো বাকি আছে। কিন্তু পেসারদের বড় আতংকের নাম হলো ইঞ্জুরি। বিশেষ করে একটা পেসার পায়ের কোনো লিগারমেন্ট ছিঁড়ে গেলে ছয়মাস বা একবছর জাতীয় দলের বাইরে থাকতে হয়। এরপর পুরোনো রুপে নিজেকে ফিরে পাওয়া অনেকের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই যেমন উদাহরণ সরূপ এবাদত হোসেনকেই দেখুন।
নিউজিল্যান্ডের মাঠিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় আনিয়ে দেয়া এবাদত হোসেন জাতীয় দলের বাইরে বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে একটা বিষয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে বিসিবি। এবাদতের বিকল্প হিসেবে হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানার মতো পেসারদের তৈরি করতে পেরেছে তারা। অবশ্য এর কৃতিত্ব দিতে হবে টাইগারদের সাবেক পেইস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। এই সাউথ আফ্রিকান বাংলাদেশের পেসারদের তৈরি করেছেন তার নিজের মতো করেই। তাই তো এদেশ ছেড়ে চলে গেলেও ফেসবুক পোস্ট বা যোগাযোগের মাধ্যমে এখনো মনে করে তার তৈরি করা শীর্ষ্যদের।